চকরিয়ায় বনভূমি দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণের হিড়িক!

মোঃ কামাল উদ্দিন, চকরিয়া :

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের অধীনে চুনতি রেঞ্জের আওতাধীন হারবাং বনবিটের বনভূমি দখলের চলছে মহোৎসব। প্রতিনিয়ত বনভূমি দখল করে ও পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। বনভূমি দখল হয়ে যাওয়ার কারণে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। আবাসভূমি হারাচ্ছে নিরীহ বন্যপ্রাণীগুলো। এক প্রকার হারবাং বনবিটের অধীনে বনবিভাগের জায়গাগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় বনভূমি শূন্য হওয়ার পথে।

সরেজমিন সাংবাদিকরা বনভূমি দখল হওয়ার নেপথ্যে কারা জড়িত রয়েছে এবিষয়ে অনুসন্ধানে নামলে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হারবাং ইউনিয়নের গয়ালমারা ৮নং ওয়ার্ডের ভেটকারঝিরি নামক স্থানে মোঃ ইউসুফ নামের এক ব্যক্তি বনভূমির জায়গার উপর নির্মাণ করে যাচ্ছে ইটের স্থায়ী স্থাপনা।

এসময় সাংবাদিকরা মোঃ ইউসুফ ও তার স্ত্রীর কাছে বনভূমির জায়গায় বসতবাড়ি নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, বনবিভাগের সুফল প্রকল্পের সুবিধাভোগী সদস্য মোজাম্মেল নামের এক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে সরাসরি বনবিটে হাজির হয়ে হারবাং বনবিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে দিতে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এরপরই তারা বনবিভাগের জমিতে এ বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন।

তবে, বসতবাড়ি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে আরো কিছু টাকা বনবিভাগের জমিতে বাড়ি নির্মাণ বাবদ দেওয়ার কথা আছে বলে জানান তারা। এছাড়াও একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কোরবানিয়াঘোনা এমপি জাফর আলম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে বনবিভাগের জায়গার উপর ইট দিয়ে স্থায়ী বসতবাড়ি নির্মাণ করছেন মোঃ বাবুল নামের এক ব্যক্তি। তার সাথে কথা বলার পর উঠে আসে ভিন্ন তথ্য।

বনভুমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার কথিত এক সাংবাদিকের মাধ্যমে হারবাংয়ের বনবিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে মোঃ বাবুলকে গুণতে হয়েছে ৫০হাজার টাকা। দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার পরই নিশ্চিন্তে বনবিভাগের জমিতে ইটের স্থায়ী বসতবাড়ি নির্মাণ করছেন বলে জানান তিনি।

এসময় তিনি আরো জানান, তাদের দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা বাড়ি নির্মাণের প্রথমদিকে দিতে না পারায় দুইবার ভেঙে দিয়েছিলো বনবিভাগ। এরপর দাবিকৃত টাকা তাদের দিলে বাড়ি নির্মাণে আর কোন বাঁধা আসেনি। অন্যদিকে, ৮নং ওয়ার্ডের সামাজিকপাড়া নতুন মসজিদ এলাকায় গেলে দেখা যায় বনবিভাগের বিশাল পাহাড় কেটে ইটের স্থায়ী বসতবাড়ি নির্মাণ করছেন আক্তার আহমেদ (প্রকাশ মিড়া আক্তার) নামের এক ব্যক্তি।

সমূহস্থানে সরেজমিন গিয়ে আক্তার আহমেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মাণ করতে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে বিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে দিতে হয়েছে ৬০হাজার টাকা। এসব টাকা সেই দালালের মাধ্যমে বিট অফিসে পৌঁছে গেলে কোন বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়নি বলে জানান তিনি।

এদিকে, এসব তথ্যের ভিত্তিতে চুনতি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার আমলে বনবিভাগের জমিতে বাড়ি নির্মাণ করতে কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি বা বনবিভাগের জমিতে বাড়ি নির্মাণ বাবদ কারো কাছ থেকে ১টা টাকাও নেওয়া হয়নি। কেউ যদি এভাবে বলে থাকে সেটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

এব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। তবে, বনবিভাগের জমি দখল করে যেখানেই বাড়ি নির্মাণের খবর পাচ্ছি সেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হচ্ছে। অতিশীঘ্রই আপনাদের দেওয়া তথ্যমতে সমূহস্থানের নির্মাণকৃত বসতবাড়িগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

অপরদিকে, এবিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বনবিভাগের পাহাড় কর্তন বা বনভূমিতে স্থায়ী বা অস্থায়ী বসতি নির্মাণ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এবং আইনগত অপরাধ। এবিষয়ে চুনতি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে কথা বলে পাহাড় কর্তনকারী ও বনবিভাগের জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।

উল্লেখ্য: বনবিভাগের পাহাড় কেটে ও বনবিভাগের জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করা ব্যক্তিদের বক্তব্যের সকল ভিডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।